Company News 24
Stay Ahead with the Latest in Business

ই কমার্স ব্যবসা বাণিজ্যকে সহজ করেছে ব্যাখ্যা কর(২০২৪)

0

ইকমার্স ব্যবসা নিয়ে আলোচনার শুরুতে প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে, ই-কমার্স কাকে বলে?

ই-কমার্স (E-commerce) হল “ইলেকট্রনিক কমার্স” বা “ইলেকট্রনিক বাণিজ্য”, যা পণ্য ও সেবা কেনা-বেচা করার একটি প্রক্রিয়া যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করা হয়। ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করে, এবং ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা কিনে। এটি বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অংশ, যেমন পণ্য অর্ডার করা, পেমেন্ট করা, এবং পণ্য ডেলিভারি। ই-কমার্স ব্যবসা প্রধানত চার ধরনের হতে পারে:

1. B2B (Business to Business): দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেন।
2. B2C (Business to Consumer): ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তার মধ্যে লেনদেন।
3. C2C (Consumer to Consumer): সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে পণ্য ও সেবা বিনিময়।
4.C2B (Consumer to Business) : যেখানে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে সেবা বা পণ্য সরবরাহ করে।
ই-কমার্সের (E-commerce) বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যকে দ্রুত, সহজ ও কার্যকর করেছে।


নিচে ই-কমার্সের প্রধান সুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো:

১.বিশ্বব্যাপী ক্রেতা ও বাজারে প্রবেশের সুযোগ:
ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সারা বিশ্বে পণ্য ও সেবা বিক্রি করতে পারে। এটি ব্যবসাকে স্থানীয় সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করে এবং বিশ্বব্যাপী নতুন বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেয়। একইভাবে, ক্রেতারা বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারে।

২. খরচ সাশ্রয়:
ই-কমার্সের জন্য প্রথাগত দোকান, শোরুম বা কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন হয় না, যা ব্যবসার খরচ কমিয়ে দেয়। অনলাইন ব্যবসায় প্রচুর পণ্য মজুদ না রেখেও বিক্রয় করা সম্ভব, ফলে মজুদ ব্যয় কমানো যায়।

৩. ২৪ ঘণ্টা ৭দিন (২৪/৭) ব্যবসায়িক কার্যক্রম :

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো ২৪ ঘণ্টা, ৭ দিন সার্ভিস দেয়, ফলে ক্রেতারা যেকোনো সময় কেনাকাটা করতে পারে। এটি বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য একটি বড় সুবিধা, কারণ দোকান খোলা বা বন্ধের চিন্তা করতে হয় না।

৪. ক্রেতাদের জন্য সহজতর কেনাকাটা :

ই-কমার্স ক্রেতাদের ঘরে বসে কিংবা যেকোনো স্থান থেকে কেনাকাটা করার সুযোগ দেয়। ক্রেতারা সহজেই বিভিন্ন পণ্য, মূল্য এবং অফার তুলনা করতে পারে, যা তাদের ক্রয়ের সিদ্ধান্ত সহজ করে।

৫. পণ্য ও সেবার বৈচিত্র্য:

ই-কমার্সের মাধ্যমে ক্রেতারা এক প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ধরনের পণ্য এবং সেবা খুঁজে পায়। এটি প্রথাগত বাজারের তুলনায় অধিক পণ্য ও সেবা সংগ্রহের সুযোগ দেয়, যা ক্রেতাদের বিকল্প বৃদ্ধিতে সহায়ক।

৬. কাস্টমাইজড মার্কেটিং :

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকের ব্রাউজিং এবং কেনার অভ্যাসের উপর ভিত্তি করে পণ্য সাজেশন দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের ক্রয় ইতিহাস বিশ্লেষণ করে কাস্টমাইজড মার্কেটিং বা বিজ্ঞাপন করতে পারে, যা বিক্রয় বাড়াতে সহায়তা করে।

৭. সহজ পেমেন্ট ব্যবস্থা :

ই-কমার্সে ক্রেতারা বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে, যেমন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ডিজিটাল ওয়ালেট ইত্যাদি। এটি ক্রেতাদের জন্য পেমেন্ট প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়।

৮. ব্যবসায়িক বিশ্লেষণ ও পরিসংখ্যান:

ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা পণ্যের বিক্রির পরিসংখ্যান, গ্রাহকদের চাহিদা এবং বাজার বিশ্লেষণ সহজেই করতে পারে। এ ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।

৯. স্বয়ংক্রিয় মজুদ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা:

ই-কমার্সে অটোমেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ, অর্ডার প্রসেসিং এবং সরবরাহ কার্যক্রম সহজে পরিচালনা করতে পারে। এটি ব্যবসায় দক্ষতা এবং সময় বাঁচায়।

১০. পরীক্ষা ও নতুন পণ্যের প্রচারণা:

ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সহজেই নতুন পণ্য পরীক্ষা করতে পারে এবং বিভিন্ন প্রচারণা চালাতে পারে। ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া এবং বিক্রির উপর ভিত্তি করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।

১১. পরিবেশগত সুবিধা:
ই-কমার্সে সরাসরি দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন কমে যাওয়ায় যানজট এবং জ্বালানির ব্যবহার কমে। এটি পরিবেশবান্ধব বাণিজ্য পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে।

এই সুবিধাগুলোর কারণে ই-কমার্স এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় ও বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।

ই-কমার্সের অসুবিধাগুলো:

ই-কমার্সের অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধা তুলে ধরা হলো:

১. প্রযুক্তি নির্ভরতা:
ই-কমার্স পুরোপুরি প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের পক্ষেই লেনদেন সম্ভব হয় না। তাছাড়া, সার্ভার ডাউন বা প্রযুক্তিগত সমস্যা হলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।

২. নিরাপত্তা ঝুঁকি:
ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন করার সময় হ্যাকিং, তথ্য চুরি, বা অনলাইন প্রতারণার ঝুঁকি থাকে। যদি সাইবার সিকিউরিটি সঠিকভাবে না থাকে, তাহলে ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা গ্রাহকের আস্থা নষ্ট করতে পারে।

৩. পণ্য না দেখার ঝামেলা:
অনলাইন শপিংয়ে ক্রেতারা পণ্য সরাসরি দেখতে, স্পর্শ করতে বা যাচাই করতে পারেন না। পণ্যের গুণগত মান বা সঠিক আকার-প্রকার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন হয়। এতে অনেক সময় ক্রেতারা প্রাপ্ত পণ্যে অসন্তুষ্ট হয়।

৪. ডেলিভারি সময় ও খরচ:
ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনা পণ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায় না। ডেলিভারির জন্য কয়েক দিন বা কখনো সপ্তাহও লেগে যায়। তাছাড়া ডেলিভারি চার্জ অতিরিক্ত খরচ যোগ করতে পারে, যা ক্রেতাদের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

৫. ফ্রড বা প্রতারণা:
ই-কমার্সে অনেক সময় ভুয়া ওয়েবসাইট বা বিক্রেতারা ক্রেতাদের প্রতারণা করতে পারে। তারা পণ্য সরবরাহ না করে অর্থ নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে অথবা নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করতে পারে।

৬. রিটার্ন ও রিফান্ড ঝামেলা:
অনলাইনে কেনা পণ্য ফেরত দেওয়া বা রিফান্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সময় জটিল হয়। অনেক কোম্পানি রিটার্ন পলিসি তেমন সহায়ক নয়, এবং এটি ক্রেতাদের জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে।

৭. বিশ্বস্ততা ও আস্থা:
অনেক ক্রেতা এখনও ই-কমার্সের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারে না। বিশেষত নতুন বা অপরিচিত ওয়েবসাইটে কেনাকাটা করতে গেলে তাদের সন্দেহ থাকে। আস্থার অভাবে অনেকেই ই-কমার্স থেকে দূরে থাকে।

৮. আইনি ও কর সম্পর্কিত জটিলতা:
অনেক দেশে ই-কমার্সের জন্য যথাযথ আইন ও কর ব্যবস্থা স্পষ্ট নয়। এর ফলে ব্যবসায়ীদের আইনি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং কর নীতিমালায় জটিলতা দেখা দেয়।

এই অসুবিধাগুলো সত্ত্বেও, ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে এবং এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির সাথে সাথে এসব সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হচ্ছে।

ই-কমার্স (e-commerce) ব্যবসা বাণিজ্যকে সহজ করেছে বিভিন্নভাবে, যা আধুনিক ব্যবসা বাণিজ্যের প্রক্রিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

১. সুবিধাজনক কেনাকাটা:
ই-কমার্সের মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্য এবং সেবা কিনতে পারে। এতে শারীরিকভাবে দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, যা সময় এবং পরিশ্রম বাঁচায়। এভাবে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জন্য সুবিধাজনক কেনাকাটার সুযোগ তৈরি করেছে।

২. বিশ্বব্যাপী ক্রেতা-বিক্রেতা সংযোগ:
ই-কমার্স ব্যবসা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি বড় সুবিধা দিয়েছে। একজন বিক্রেতা বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারে, এবং ক্রেতারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারে। এটি বাণিজ্যের ভৌগলিক সীমাবদ্ধতা দূর করেছে।

৩. কম খরচ :
প্রথাগত ব্যবসায় স্থায়ী দোকান, কর্মী এবং অন্যান্য খরচ অনেক বেশি। ই-কমার্স ব্যবসায় এই খরচগুলো অনেক কম। ব্যবসায়ীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয় করতে পারে, যা খরচ সাশ্রয়ী এবং লাভজনক।

৪. ২৪/৭ ব্যবসায়িক কার্যক্রম:
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস প্রদান করতে সক্ষম। এতে ক্রেতারা যেকোনো সময় কেনাকাটা করতে পারে, আর বিক্রেতারা বিক্রয়ের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে। এটি বিক্রির সুযোগ বৃদ্ধি করে।

৫. বিস্তারিত তথ্য ও বিশ্লেষণ:
ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং ক্রয় আচরণ বিশ্লেষণ করতে পারে। এটি ব্যবসায়ীদের তাদের পণ্যের চাহিদা বুঝতে সাহায্য করে এবং বিজ্ঞাপনী প্রচারণা ও মার্কেটিং কৌশল উন্নত করতে সহায়তা করে।

৬.সহজতর মজুদ ব্যবস্থাপনা:
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য মজুদ (inventory) ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ। অটোমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে তারা পণ্যের মজুদ, স্টক এবং সরবরাহ ব্যবস্থা নির্ধারণ করতে পারে। এর ফলে অপচয় কম হয় এবং সময়মতো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।

৭. নিরাপদ লেনদেন ব্যবস্থা:
ই-কমার্সে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, এবং ডিজিটাল ওয়ালেট। এগুলো দ্রুত এবং নিরাপদ লেনদেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

এই কারণগুলো ই-কমার্সকে বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্যে অপরিহার্য করে তুলেছে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আপনি যদি এককভাবে হোক বা কারো সাথে হোক ই কমার্স ব্যবসা করতে চান, এখনই শুরু করে দিন। হয়তো প্রথম বছর অল্প অল্প বিক্রি  হবে, আয় হবে, কষ্ট হবে আপনার, কিন্ত ভবিষ্যত উজ্জ্বল। সারা বিশ্বে বাড়ছে দিন দিন  ই-কমার্স এর ব্যবসা ও বিনিয়োগ।

কনি/মনির

Leave A Reply

Your email address will not be published.

google-site-verification=1ANNK1RMHaj1Iw7yR8eRAr3R5K-aLbxTqN87o-pnte8 google-site-verification: google05340dd170c353ef.html