Company News 24
Stay Ahead with the Latest in Business

জমি বা সম্পত্তি ক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রকৃত মূল্য দেখান না কেন?

রিয়েল এস্টেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত

0

করপোরেট নিউজ ২৪ : ফ্ল্যাট ও জমি কেনার ক্ষেত্রে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ এখনো বাতিল করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্প্রতি নগদ অর্থ, বন্ড, সিকিউরিটিজ এবং অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুযোগ বাতিল করা হলেও, রিয়েল এস্টেট খাতে এই সুযোগ রয়ে গেছে। ফলে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়ে এখনো কালো টাকা ফ্ল্যাট ও জমিতে বিনিয়োগ করা সম্ভব।

এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গণঅভ্যুত্থানের পরে সাধারণ ক্ষমা বাতিলের দাবি উঠলেও, এনবিআর শুধুমাত্র আংশিকভাবে এই সুযোগ বাতিল করেছে। এতে রিয়েল এস্টেট খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত থাকায় বৈষম্য বজায় থাকবে বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি এ সিদ্ধান্তকে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করার সম্ভাবনা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং সরকারের উচিত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা।

এদিকে, এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া জানান, কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ না করে আংশিকভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সমস্যার সমাধান হবে না। বিশেষ করে, জমি ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে এখনো এই সুযোগ অব্যাহত রাখার মাধ্যমে রিয়েল এস্টেটে কালো টাকা বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।

২০২০-২১ অর্থবছর থেকে এনবিআর করদাতাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ বৈধ করার সুযোগ দিয়ে আসছে, যা চলতি অর্থবছরেও বহাল রয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে, তবে ফ্ল্যাট ও জমি ক্রয়ে অবৈধ অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ নতুন কিছু নয়।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জমি ও সম্পত্তির বাজারমূল্য এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে অসঙ্গতি থাকার কারণে বিপুল অপ্রদর্শিত সম্পদ তৈরি হচ্ছে। সরকারকে এমন একটি পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রকৃত মূল্য দেখাতে পারেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২২ বার কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হলেও, এতে তেমন সাড়া মেলেনি। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে।

জমি বা সম্পত্তি ক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রকৃত মূল্য দেখান না কেন?

জমি বা সম্পত্তি ক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রকৃত মূল্য দেখান না মূলত কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে। এ প্রক্রিয়ায় সম্পত্তির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্য দেখিয়ে দলিল তৈরি করা হয়। এর কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:

1. **উচ্চ রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটি:** বাংলাদেশে জমি বা সম্পত্তি কেনার সময় উচ্চ হারে রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতারা কম মূল্যে সম্পত্তি দেখিয়ে দলিল তৈরি করেন, যাতে ফি ও ডিউটি কমে যায়।

2. **আয়কর এড়ানোর চেষ্টা:** সম্পত্তি ক্রয়ে প্রকৃত মূল্য দেখালে বিক্রেতাকে বেশি আয়কর দিতে হয়। অনেক সময় বিক্রেতার কাছে এই অর্থ অপ্রদর্শিত (কালো টাকা) থাকে, যা আয়ের উৎস হিসাবে দেখাতে চায় না। ফলে কম মূল্যে সম্পত্তি দেখিয়ে আয়কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন।

3. **অপ্রদর্শিত অর্থের ব্যবহার:** ক্রেতাদের অনেকেই কালো টাকা দিয়ে সম্পত্তি কিনতে চান। সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য দেখালে কালো টাকার হিসাব দিতে হবে, যা এড়ানোর জন্য তারা কম মূল্যে দেখানোর চেষ্টা করেন।

4. **বাজারের অনিয়ম:** জমি ও সম্পত্তির বাজারে সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রকৃত বাজার মূল্য অনেক বেশি হয়। তবে সরকারি রেকর্ডে কম মূল্য দেখিয়ে এই বৈষম্যের সুযোগ নেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

এ প্রক্রিয়ায় সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য দেখালে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আর্থিক ক্ষতি ও প্রশাসনিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় বলে তারা এই পদক্ষেপ নেন।

কনি/মনির

Leave A Reply

Your email address will not be published.

google-site-verification=1ANNK1RMHaj1Iw7yR8eRAr3R5K-aLbxTqN87o-pnte8 google-site-verification: google05340dd170c353ef.html