Company News 24
Stay Ahead with the Latest in Business

আগামী নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন-ড. ইউনূস

0

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন বর্তমান সরকার যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তা দেশের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। তিনি বলেন, “শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমাদের সবার।” তবে এই অস্থির সময়েও জনগণের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেন।

সংবিধান সংস্কার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

সংবিধান পুনর্লিখন বা সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি জাতির জন্য একটি বিরল সুযোগ। আমরা জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চাই, তবে এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধানের পরিবর্তন বা পুনর্লিখন বিষয়ে একটি কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যা বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এ বিষয়ে মতানৈক্য থাকায় সরকারকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার আগে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

বাংলাদেশের অর্থনীতির অস্থিরতা নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একটি লুটপাটের অর্থনীতি থেকে উদ্ভূত।” তিনি আরও বলেন, পূর্ববর্তী সরকার অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, যার ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে সংকট তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব, ঋণের বোঝা এবং বড় প্রকল্পের দায় বর্তমান সরকারের ওপর চাপ ফেলেছে। তবে সরকারের উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতিকে একটি মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

সুশাসন ও জনপ্রশাসনের সংকট

সুশাসন প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, “অনেক লোক পালিয়ে গেছে, যারা গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে ছিলেন। ফলে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা পূরণ করা কঠিন।” তবে নতুন বিচারক ও প্রশাসনিক প্রধানদের নিয়োগ দিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি করার চেষ্টা চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সুশাসনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে আরও সময় ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের সমাধান

ড. ইউনূস সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে বলেন, “এটি কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও সংখ্যালঘু সমস্যা বিদ্যমান।” তিনি জানান, সরকার সংবিধান অনুযায়ী সবার অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও কিছু ঘটনায় রাজনৈতিক অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে, তিনি পরিস্থিতি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “ভারত আমাদের একমাত্র প্রতিবেশী, এবং আমাদের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে।” তিনি দুই দেশের মধ্যে চলমান বিরোধ নিরসনে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার পরামর্শ দেন। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও জানান।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ

আওয়ামী লীগপন্থীদের প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের চেষ্টা হলো দলীয় প্রভাব কমিয়ে দেয়া। আমরা নির্দলীয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি, যাতে কোনো পক্ষের ভারী প্রভাব না পড়ে।” তবে এটি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ বলে তিনি স্বীকার করেন।

আগামী নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আশা

আগামী নির্বাচনের বিষয়ে তিনি আশাবাদী যে, এটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন। তিনি বলেন, “নির্বাচনই আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্য। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সংস্কার নিশ্চিত করতে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।” ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন, নতুন বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধশালী গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকার থেকে বোঝা যায়, সরকার দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সংবিধান সংশোধন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়ন করতে চান।

কনি/মনির

Leave A Reply

Your email address will not be published.

google-site-verification=1ANNK1RMHaj1Iw7yR8eRAr3R5K-aLbxTqN87o-pnte8 google-site-verification: google05340dd170c353ef.html